Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

খাদ্য উৎপাদন

পান চাষ

পান বাংলাদেশের একটি অন্যতম অর্থকরী ফসল। বিভিন্ন ধরণের ধর্মীয় উৎসবসহ, বিয়ে-শাদীতে পানের খুব চাহিদা আছে। আমাদের অঞ্চলে পানের চাষ হয়। সাধারণত বরজ তৈরি করে পানের চাষ করতে হয়। অনেক স্থানেই সুপারি গাছ এবং অন্যান্য গাছের গোড়ায় পানগাছ লাগানো হয়। এসব পানকে বলা হয় গাছপান। আবহাওয়া, মাটি, জাত, চাষাবাদ পদ্ধতি ইত্যাদির কারণে স্থানভেদে পানের ফলন কম বেশি হয়।

 

 

 

পান চাষের পদ্ধতি 

 পানের জাত

 বাংলা, মিঠা, সাচি, কর্পূরী, গ্যাচ, নাতিয়াবাসুত, উজানী, মাঘি, দেশী, বরিশাল ওঝালি প্রভৃতি জাতের পান বরজে চাষ করা হয়। বিভিন্ন অঞ্চলে যেসব জাতের পানচাষ হয় তা নিচে উল্লেখ করা হলো- 

 * পানের জাত                ও                                            অঞ্চল

মিঠাপান 

চট্টগ্রাম

সাচিপান 

মহেশখালী 

 

 জমি তৈরি

 

  • পানের জমি ভালোভাবে চাষ করে নিতে হবে। 
  • আবাদি জমিতে হালকা চাষ দিতে হবে এবং অনাবাদি জমিতে গভীরভাবে চাষ দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। 
  • গাছের গুঁড়ি, গুল্ম জাতীয় গাছের শিকড় ভালোভাবে পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। 
  • জমি ভালোভাবে চাষ দিয়ে আগাছা বাছাই করে, মই দিয়ে সমান করে নিতে হবে। 
  • বৃষ্টির পানি জমা বন্ধ করতে জমি একদিকে সামান্য ঢালু রাখতে হবে। 
  • জমি চাষ করে কিছুদিন ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। 
  • মাঝে মাঝে লাঙ্গল দিয়ে মাটি ওলট-পালট করে দিতে হবে। 
  • চারাগাছের জন্য পর্যাপ্ত ছায়ার ব্যবস্থা করতে হবে। 
  • বাতাস বেশি হলে চারদিকে বাতাস প্রতিরোধী গাছ লাগাতে হবে। 
  • সেচ ও পানি নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকতে হবে। 
  • পানের লতা লাগানোর আগে কোন সার প্রয়োগ করা যাবে না। 

 

 

বেড তৈরি

  • আয়তনের উপর ভিত্তি করে চলাফেরার সুবিধার জন্য জমিকে কয়েকটি ব্লকে ভাগ করে নিতে হবে। 
  • প্রতিটি ব্লকে কতগুলো বেড থাকবে সেখানে পান গাছ লাগাতে হবে। 
  • প্রতিটি বেড ৫০ সে.মি. চওড়া এবং ১৫ সে.মি. উঁচু হবে। 
  • প্রতি বেডে দুইটি সারি থাকবে। 
  • সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ২০-২৫ সে.মি.। 
  • প্রতিটি সারির বাইরের দিকে ১২.৫ সে.মি. জায়গা ফাঁকা থাকবে। 
  • প্রতিটি সারিতে একটি গাছ থেকে অপর গাছের দূরত্ব হবে ১৫-২০ সে.মি.। 
  • দুই সারি বিশিষ্ট একটি বেড থেকে অপর বেডের দূরত্ব হবে ৫০ সে.মি.। 

 

 

 

  পানের কাটিং তৈরি

  • পানের বংশবিস্তার লতা বা কাটিং এর মাধ্যমে করতে হবে। 
  • কাটিং তৈরির জন্য সুস্থ সবল ও রোগহীন বীজ-লতা বাছাই করতে হবে। 
  • বাছাই করা লতা থেকে ৭-৮ মাস পান সংগ্রহ বন্ধ রাখতে হবে। 
  • বীজতলার বয়স ২-৩ বছরের মধ্যে হলে ভালো হবে। 
  • পানের লতার উপরের এবং মাঝের অংশ কাটিং হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। 
  • কাটিং এর দৈর্ঘ্য ৩০-৪৫ সে.মি. হতে হবে। তবে অঞ্চলভেদে ১০ সে.মি. অথবা ৮০ সে.মি.ও হতে পারে। 
  • প্রতি ৩৩ শতাংশ (১বিঘা) জমির জন্য ৮৫৮০-৯২৪০টি কাটিং লাগবে। 
  • বীজতলা থেকে কাটিং সংগ্রহ করে প্রায় ৮০টির মতো কাটিং একসাথে বেঁধে একটা বান্ডিল তৈরি করতে হবে। 
  • বান্ডিল কাদা মেখে ছায়া আছে এমনজায়গায় রেখে প্রতিদিন ২-৩ বার নতুন করে কাদা লাগিয়ে দিতে হবে অথবা পানিদিয়ে শুকিয়ে যাওয়া কাদা নরম করে দিতে হবে। 
  • ২-৩ দিনের মধ্যে কাটিং এর গিট থেকে নতুন শিকড় বের হলে কাটিং লাগানোর উপযুক্ত হবে। 
  • ৪ দিনের বেশি কাটিং রাখা যাবে না। 

 চারা রোপণ

  • প্রতিটি বেডে দুটি সারি থাকবে। প্রতিটি সারিতে ১৫-২০ সে.মি. পরপর একটি করে গর্ত করতে হবে। 
  • প্রতিটি গর্তে একটি করে কাটিং সারিবদ্ধভাবে লাগাতে হবে। 
  • রোপণের এক মাসের মধ্যে গিরা থেকে অঙ্কুর এবং আগায় নতুন কুশি বের হবে। 
  • এ সময় যখন লতা বড় হতে থাকবে তখন নতুন লতা দু’মিটার লম্বা চিকন বাঁশের খুঁটির সাথে বেঁধে দিতে হবে। 
  • কাটিং লাগানোর পর যদি কিছু গাছ মারা যায় তাহলে তা সরিয়ে নতুন কাটিং দিয়ে শূণ্যস্থান পূরণ করতে হবে।

 

চারা রোপণের সময়

 স্থানীয়আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে চারা রোপণের সময় ঠিক করতে হবে। আমাদের দেশেসাধারণত বর্ষার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পানের চারা লাগানো হয়ে থাকে। কোথাওআবার শীতের শুরুতে এবং শীতের শেষেও পানের চারা লাগানো হয়। নিচে অঞ্চলভেদেপানের চারা লাগানোর সময় দেয়া হলো-

ছোট মহেশখালীতে

আগস্ট-সেপ্টেম্বর 

 সেচ ও নিষ্কাশন

  • জমি যাতে খুব বেশি ভেজা বা শুকনো না হয় সেজন্য পানের জমিতে ঘনঘন হালকা সেচ দিতে হবে। 
  • বর্ষাকালে অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। 
  • সেচ দেয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন আধা ঘণ্টার বেশি পানি জমে না থাকে। 
  • লতা নামানোর সময় স্বাভাবিকের তুলনায় ঘন ঘন সেচ দিতে হবে। 

 লতা নামানো

  • পানের লতা বরজের (পান চাষের জন্যতৈরি ছাউনি বা ঘর) ছাউনি পর্যন্ত (২-২.৫ মিটার উচ্চতা) পৌঁছালে তা টেনেনিচে নামিয়ে পাতাছাড়া অংশকে পেঁচিয়ে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। একে বলেপানের লতা নামানো। 
  • বছরে সাধরাণত দু’বার (১৫ ফেব্রুয়ারি-১৫ এপ্রিল এবং ১৫ জুলাই-১৫ সেপ্টেম্বর) পানের লতা নামানো হয়। 
  • গাছের বৃদ্ধির উপর নির্ভর করে লতা নামাতে হবে। বৃদ্ধি বেশি হলে ঘনঘন নামাতে হবে। 
  • লতা নামানোর আগে সংগ্রহ করার যোগ্য সব পান তুলে ফেলতে হবে। 
  • লতার উপরের ৩০-৫০ সে.মি. অংশ মাটির উপরে রেখে নিচের অংশটুকু গোল করে অথবা বাংলা ৪ এর মতো করে পেঁচিয়ে মাটির নিচে পুঁতে দিতে হবে। 

 চাষের সময় পরিচর্যা

  • পানে বিভিন্ন ধরণের জলজ, স্থলজ এবং লতা জাতীয় গাছের আক্রমণ হয়। তাই সময়মতো আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। 
  • বর্ষা মৌসুমে মাসে ১-২ বার আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। 

 সার প্রয়োগ

 কৃষকদেরমতে গুণগত মানসম্পন্ন ভাল ফলন পেতে হলে পান চাষের জমিতে যতটুকু সম্ভব জৈবসার প্রয়োগ করতে হবে। মাটি পরীক্ষা করে মাটির ধরণ অনুযায়ী সার প্রয়োগ করতেহবে। জৈব সার ব্যবহার করতে হবে, তাহলে মাটির গুণাগুন ও পরিবেশ ভাল থাকবে।

 পান সংগ্রহ

  • পানের লতা লাগানোর ৬-৮ মাসের মধ্যে পান পাতা তোলার উপযুক্ত হবে। 
  • রবি মৌসুমে দেরিতে এবং খরিফ মৌসুমে দ্রুত পান সংগ্রহ করা যাবে। 
  • বর্ষাকালে প্রতিটি লতা থেকে সপ্তাহে দু’বার পাকা পাতা সংগ্রহ করা যাবে। 
  • রবি মৌসুমে এবং খরার সময়ে নিয়মিত সেচের ব্যবস্থা করতে পারলে পাতা সংগ্রহের পরিমাণ বাড়ানো যাবে। 
  • পাতা হলুদ হওয়ার আগে না তুললে বাজারদর কমে যাবে। 
  • বোঁটাসহ পান লতা থেকে হাত দিয়ে ছিঁড়ে সংগ্রহ করতে হবে। 

 সতর্কতা

  • পানে কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। 
  • বালাইনাশক ছিটানোর আগে পান তুলে নিতে হবে এবং ব্যবহারের কমপক্ষে ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে পান পাতা সংগ্রহ করা যাবে না। 

 

 

 বাছাই ও প্রক্রিয়াজাতকরণ

  • পান সংগ্রহ করার পর বাছাই করে ছোট, কাঁচা, ছেঁড়া, কাটা, পোকা ও রোগে আক্রান্ত পান                     বাদ দিতে হবে। 
  • পানের আকার, খাওয়ার উপযোগী, পুরুত্ব ইত্যাদি অনুযায়ী পান বাছাই করতে হবে। 
  • পাতা বেশিক্ষণ সতেজ রাখার জন্য প্যাকিং করার সময় একটু পানি ছিটিয়ে দিতে হবে। 
  • পান পচনশীল হওয়ায় পান তুলার পরপরই তা বিক্রি করতে হবে।

 

 

 রোগবালাই ও প্রতিকার

 

পান গাছেরপ্রধান রোগ হচ্ছে শিকড় মরা, পাতা পচারোগ, পাতার দাগ বা ক্ষত রোগ, লতা পচারোগ ইত্যাদি। এছাড়া বিভিন্ন পোকামাকড় এবং ছোট ছোট মাকড়সার আক্রমণেও পানেরপাতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পানের রোগ প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রয়োগকরতে হবে। পোকার আক্রমণের ক্ষেত্রে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত জৈব কীটনাশকব্যবহার করা যেতে পারে। এতে পোকা দমন না হলে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণঅধিদপ্তরের ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তা অথবা উপজেলা কৃষি অফিসেপরামর্শের জন্য যোগাযোগ করা যেতে পারে। 

 

পান চাষের আনুমানিক খরচ

 মূলধন

 পান চাষশুরু করার জন্য ১৫০০০ টাকার প্রয়োজন হবে। মূলধন সংগ্রহের জন্য ঋণের প্রয়োজনহলে নিকট আত্মীয়-স্বজন, সরকারী ও বেসরকারী ঋণদানকারী ব্যাংক বা বেসরকারীপ্রতিষ্ঠান (এনজিও)- এর সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে। এসব প্রতিষ্ঠান শর্তসাপেক্ষে ঋণ দিয়ে থাকে।

 * ১বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে পান উৎপাদনের জন্য 

খরচেরখাত

পরিমাণ

আনুমানিকমূল্য (টাকা)

পানেরকাটিং 

৮৫৮০-৯২৪০টি কাটিং 

১০৪০ 

জমিতৈরি 

৩/৪বার 

১৫০০ 

পানিসেচ 

আনুমানিক৪ ঘণ্টা 

৪০০ 

শ্রমিক 

২৫জন (প্রতিজন ২০০) 

৫০০০ 

সার 

পাথরচুন=৫ কেজি (১ কেজি ২০ টাকা)=১০০ টাকা   খৈলের গুড়া=১৫,কেজি (১ কেজি ১০ টাকা)=১৫০ টাকা ,টিএসপি=১০কেজি (১কেজি ৩০ টাকা)=৩০০ টাকা ,মিউরেটঅব পটাশ= ১.২৫ কেজি (১ কেজি ৩০ টাকা)=৩৮ টাকা 

৫৮৮ 

প্রয়োজনঅনুসারে জৈব সার 

নিজস্ব 

জমিভাড়া 

একবছর 

৪৫০০ 

মোটখরচ 

 

১৩,০২৮ 

মাটিরজৈব গুনাগুণ রক্ষা ও উৎপাদনখরচ কমানোর জন্য জৈব সার ও জৈব কীটনাশক ব্যবহার করাযেতে পারে।সেক্ষেত্রে লাভের পরিমাণ বাড়তে পারে।

 তথ্যসূত্র : মাঠকর্ম, চাটমোহর, পাবনা,  অক্টোবর ২০০৯ 

 প্রশিক্ষণ

পান চাষকরার আগে এ বিষয়ে অভিজ্ঞ কারো কাছ থেকে পান চাষের বিস্তারিত জেনে নিতে হবে।পান চাষ সংক্রান্ত কোন তথ্য জানতে হলে স্থানীয় কৃষি সম্পদ অধিদপ্তরেরইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তা অথবা উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করা যেতেপারে। এছাড়া বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে যুব উন্নয়নঅধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে। এসব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে নির্ধারিতফি এর বিনিময়ে কৃষি বিষয়ক প্রশিক্ষণ নেয়া যেতে পারে।

 পান একটিজনপ্রিয় ফসল। পান চাষ এবং বিক্রি করে দেশে যেমন অর্থ উপার্জন করা যায় তেমনিবিদেশে পান রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যায়।